পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা একসময় তামাকের আগ্রাসনে ভরপুর থাকলেও সময়ের পরিবর্তনে এখন বিভিন্ন এলাকায় তামাক ছেড়ে শুরু হয়েছে পান চাষ। খরচের তুলনায় লাভজনক হওয়ায় তামাক বাদ দিয়ে ১২ মাসি পান চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। আর এই পান চাষের ফলে চাষিদের জীবনে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। পরিবেশ ফিরে পেয়েছে নিজস্ব ভারসাম্য।
উপজেলার বাটনাতলী ইউনিয়নের ঘোরখানা এলাকার কৃষক আব্দুল মালেক বেশ কয়েক বছর যাবৎ তামাক চাষ করে আসলেও সম্প্রতি তিনি ২০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ১২ মাসি মিষ্টি পানের বরজ। এতে তিনি সফলতাও পেয়েছেন। এসেছে পারিবারিক স্বচ্ছলতা। সৃষ্টি করেছে স্থানীয় কর্মসংস্থান। স্বপ্ন দেখছেন বানিজ্যিকভাবে পান চাষ বৃদ্ধি করে এই অঞ্চলের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের।
পান চাষী আব্দুল মালেক জানান, গেলো বছরের শুরুতে তিনি চট্টগ্রামের মহিশখালী হতে পানের লতা সংগ্রহ করে ২০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি পানের চাষ শুরু করেন। জমির পানের বরজে মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি, শ্রমিক, পানের লতাসহ ১ লাখ টাকা প্রাথমিক অবস্থায় খরচ হয়। আর প্রথম বছরই তিনি প্রায় দেড় লক্ষ টাকার পান ও পানের লতা বিক্রি করেন। চলতি বছর থেকে খরচ খুবই সামান্য হয়। কারণ একটি পানের বরজ তৈরি করার পর মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি সংস্কার ছাড়া অনেক বছর পর্যন্ত পানের বরজ অক্ষুণ্ন থাকে। সঠিক বাজারজাত করতে পারলে এ বছর প্রায় ৪-৫ লক্ষ টাকার পান (লতাসহ) বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদি। এছাড়াও তার দেখাদেখি এই এলাকায় বাড়তে শুরু করেছে পান চাষির সংখ্যা। স্থানীয় কৃষক নাছির উদ্দিন তার ৩০ শতাংশ জমিতে শুরু করেছেন পান চাষ।
জানা যায়, বহুবছর ধরে উপজেলার যোগ্যাছোলা, ঘোরখানা, ছদুরখীল, তুলাবিল এলাকায় তামাক চাষ হলেও সম্প্রতি বদলে গেছে চিত্র। কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন সংগঠনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও কৃষকদের বিকল্প জীবিকায়নে সহায়তায় শতাধিক কৃষক তামাক ছেড়ে ঝুঁকেছেন শাক-সবজি ও পান চাষে। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের সহায়তা চান কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান বলেন, তামাক চাষের জমিতে সবজি চাষের বিপ্লব ঘটেছে। পাশাপাশি নতুন করে পান চাষও শুরু হয়েছে। এখানকার মাটি পান চাষের জন্য খুবই উপযোগি। ফসলের বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে শাক-সবজির পাশাপাশি কৃষকরা পান চাষে এগিয়ে আসতে পারে। এতে করে এই এলাকার কৃষি আরো সমৃদ্ধ হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।