মো:নাজমুল হোসেন রনিঃ
বর্তমানে সময়ে ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে ঘরে না ফেরার চিন্তা ও সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক তাড়া করে বেড়ায়। সড়ক যোগাযোগের বিস্তৃত এই নেটওয়ার্কে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে।
প্রতিনিয়ত দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। যার ক্ষয়ক্ষতি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। এতে নিহত এবং আহত হওয়া কর্মক্ষম মানুষের পরিবারের জীবনযাত্রা কী দুর্দশা ও দুঃসহ পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়, তার কোনো হিসাব নেই। এখন তো এমন দুর্ঘটনা ঘটছে যে, পুরো পরিবারই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। কেন ঘটছে, তার কারণ সবারই জানা। সড়কে চালকদের বেপরোয়া আচরণ, অদক্ষ চালক, অসচেতনতা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, সড়কের দুর্দশা, ধীরগতির অবৈধ যানবাহন ইত্যাদি নানা কারণ চিহ্নিত হয়ে আছে। এ কারণগুলোর সমাধান করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যেত। জনসচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় সরকারি বেসরকারি পদক্ষেপই এই ধরনের পরিস্থিতিকে রুখে দিতে পারে।
প্রতিদিন সংবাদপত্রে যে খবরটি অনিবার্য তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে বিভিন্নভাবে যানবাহনগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে। এছাড়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, এমন কি পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হওয়ার সময়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনা দেখে মনে হয় মৃত্যু যেন ওঁত পেতে বসে আছে রাস্তার অলিতে-গলিতে,এছাড়া উচু নিচু পাহাড়ি রাস্তায় হচ্ছে প্রতিদিন সড়ক দূর্ঘটনা,জাতীয় দৈনিক পত্রিকার পাতায় জেলা শহর ও দশটি উপজেলাসহ নানিয়ারচরেও ঘটছে অহরহ দূর্ঘটনা,সড়কের আইন মানতে নারাজ সিএনজি,বাইক চালকেরা।
এই বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মো:সাব্বির রহমান জানিয়েছেন,মামলা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা আমারা প্রতিনিয়তই করছি কিন্তু লাইসেন্সবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, অভিবাবক ও জনসচেতনতা না বাড়লে কোন সমাধান হবে না।
শনিবার সকালে (১২ই জুন) খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি সড়কের মাঝপথে নানিয়ারচর বগাছড়ি টি জয়েন্টে সিএনজি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে দূর্ঘটনা ঘটে,এতে চালক সহ আরোহী দুইজন মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন,বর্তমানে তাদেরকে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে,তারা হলেন,জ্যাকসন চাকমা(১৭), রাঙ্গামাটির বাসিন্দা,গৌরিকা চাকমা(২২) শিমুলতলী রাঙ্গামাটির বাসিন্দা,সজিব কর্মকার(৩৫)নানিয়ারচরের বাসিন্দা।
এছাড়া স্থানীয় সূত্রে রাঙ্গামাটির সচেতন মহল জানিয়েছেন,গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং কে দায়ী করা হয়। পুলিশ রিপোর্টেও বলা হয় অতিরিক্ত গতি ও চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া গাড়ি দ্রুতবেগে ব্রিজে ওঠার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ইতিহাস অনেক রয়েছে। রাঙ্গামাটির অধিকাংশ রাস্তাই অপ্রশস্ত। যার ফলে দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এই রাস্তাগুলো প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্ত নয়। ফলে এ দুটি পথেই দুর্ঘটনা ও হতাহত বেশি হয়। তাছাড়া দেশের সর্বত্র অপ্রশস্ত রাস্তায় অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। পাহাড়ি এলাকায় ওভার লোড মানে ধারণক্ষমতার বেশি মাল বহন করা। ফলে চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। আইন অমান্য,সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ আইন অমান্য করা, এছাড়া পাহাড়ি সড়ক পথে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে, কিন্তু এই বিশাল যানবাহন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। আধুনিক যুগ সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রযুক্তির ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে অনেক সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। গাড়ির চালকরা গাড়ি চালানোর সময় ফোনে কথা বলে, গান শোনে। ফলে অসর্তক হয়ে পড়েন। এতে করে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালক, সড়কের ওপর অবৈধ হাটবাজার, অবৈধ স্থাপনা, বিকল্প রাস্তার ব্যবহার না করে যখন-তখন রাস্তা খোঁড়াখুড়ি, যানবাহনে ব্যবহৃত তেলে ভেজাল এবং রাস্তার মধ্যে প্রয়োজনীয় ডিভাইডার না থাকা প্রভৃতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অসীম। এর ফলে কেবল মানুষের মৃত্যু নয়, অপূরণীয় আরো হাজারো ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় জনসাধারণের জীবনে।
এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক দৈনিক গিরিদর্পনের সম্পাদক আল-হাজ্জ মকছুদ আহমেদ বলেন, দুর্ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এর ফলে হঠাৎ করে বিপর্যয় নেমে আসে একটি পরিবারে। সেই শোক গোটা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের বুকে শেলের মতো বিধে থাকে সারা জীবন। অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজ ও দেশ হারায় তার কৃতি সন্তানদের। এ দুর্ঘটনা অনেককে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়।
তিনি আরো বলেন,সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের উপায়: সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং নিষিদ্ধকরণ। আর এ জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেয়া উচিত। ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে হবে। লাইসেন্স প্রদানের আগে চালকের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করতে হবে। ফিটনেস, সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো প্রতিরোধ করতে হবে। পথচারীকে সতর্কভাবে চলাফেরা করা। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন বন্ধ করা। পাহাড়ি সড়ক মহাসড়কের পাশে হাট-বাজার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনের ভূমিকা আরো বেশি সক্রিয় করতে হবে। প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা করা। প্রতিটি গাড়ির চালককে স্মরণ রাখতে হবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, গাড়ি চালক সমিতি এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মো:মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে উক্ত বিষয়টি নজরে এনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান,প্রত্যেক অভিবাবক ও চালকদের আরো সচেতন হতে হবে এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরকে গাড়ি চালনা বন্ধ করতে নজরদারিতে রাখতে হবে। এই বিষয়ে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাঙ্গামাটি এলাকাবাসী।